Society for Amateur Astronomers of Bangladesh

আকাশ পর্যবেক্ষণ

আকাশ পর্যবেক্ষণ
মোঃ আবিদ খান

বসন্তকালের আকাশে কোন বিশেষ তারকা মন্ডল বা তারকা পুঞ্জ অবলোকন করতে হলে যখন চাঁদে আলো অনুপস্থিত এমন সময় শেষ পৃষ্ঠায় নির্দেশিত মানচিত্র নিয়ে উত্তর গোলার্ধের তারকামন্ডল বের করার জন্য প্রথমে মানচিত্রটির পূর্ব দিকটা ডান হাতে ধরে উত্তর দিকে মুখ করে দাড়ান। আবার দক্ষিণ গোলার্ধের তারকা  মন্ডল সমুহ বের করার জন্য মানচিত্রটির পশ্চিম দিককে বাম হাতে ধরে দক্ষিণ দিকে মুখ করে দাড়ান। প্রথমে উজ্জ্বল নক্ষত্র গুলির সঙ্গে পরিচিত হোন। পরে উজ্জ্বল নক্ষত্র গুলির সাহায্য নিয়ে অন্যান্য নক্ষত্র বা নক্ষত্র মন্ডল খুজে বের করুন।

বসন্তকালের রাতের আকাশে ফেব্রুয়ারী, মার্চ এবং এপ্রিল মাসের উল্লেখযোগ্য নক্ষত্রমন্ডল গুলো সন্নিবেশ করা হয়েছে। এই মানচিত্রে ৩৫টি তারকা মন্ডলের প্রায় ৩২০ টি নক্ষত্রের অবস্থান দেখানো হয়েছে। নক্ষত্র মন্ডলী সমূহের উজ্জ্বল নক্ষত্রের সঙ্গে রেখা টেনে তাদের কাল্পনিক আকৃতি দেওয়া হয়েছে।

বসন্তকালের রাতের আকাশে উল্লেখ্যযোগ্য যে সমস্ত নক্ষত্র মন্ডল দেখা যাবে সে সমস্ত নক্ষত্র মন্ডলের বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হলঃ

অরিগা (AURIGA):  উত্তর আকাশে ALDEBARAN  এর চেয়েও উজ্জ্বল একটি নক্ষত্র দেখা যাবে  বৃষ রাশির ঠিক উত্তরে। নক্ষটির নাম ক্যাপেলা (CAPELLA), সমগ্র আকাশের ষষ্ঠ এবং অরিগা মন্ডলের প্রথম উজ্জ্বল নক্ষত্র। হালকা হলুদ  রংয়ের তারাটির প্রভা ০.১। ক্যাপেলা  তারাটির দক্ষিন দিকে ত্রিভুজের আকৃতিতে তিনটি ছোট নক্ষত্র দেখা যায়, যাদের কে একসঙ্গে “KIDS” বলে। ত্রিভুজটির উত্তর কোনের নক্ষত্রটির নাম এপসিউলন অরিগা। বিজ্ঞানীদের মতে  এপসিউলন অরিগা এ পর্যন্ত দেখা অন্যতম বড় নক্ষত্র|সূর্য থেকে ৩২০০ আলোক বর্ষ দূরে অবস্থিত নক্ষত্রটির ব্যস ২০০০ মিলিয়ন মাইল। অরিগা নক্ষত্র মন্ডলে M36, M37, M38 নামে তিনটি মুক্ত স্তবক আছে।

ক্যানিস মেজর (CANIS MAJOR):  ওরিয়ন মন্ডলের সামান্য দক্ষিন দিকে যে নক্ষত্রটি খুব সহজেই চোখে পরে তার নাম SIRIUS(লুব্দক)।  SIRIUS সমগ্র আকাশের সবচেয়ে  উজ্জ্বল নক্ষত্র। ওরিয়নের বেল্টের তিনটি তারা যোগ করে দক্ষিন- পূর্ব দিকে এগিয়ে গেলেই একে পাওয়া যাবে। সাদা বর্নের নক্ষত্রটির উজ্জ্বলতা -১.৫ এবং দূরত্ব ৮.৭  আলোকবর্ষ। SIRIUS এর অষ্টম প্রভার একটি  স্বেত বামন সঙ্গি আছে। SIRIUS ক্যানিজ মেজর নক্ষত্র মন্ডলে অবস্থিত। রুপকথায় মন্ডলটিকে একটি কুকুরের আকৃতি কল্পনা করা হয়েছে। M41 নামে এ মন্ডলে একটি মুক্ত তারা স্তবক আছে।

জেমিনি (GEMINI):  রাশি চক্রের তৃতীয় সদস্য GEMINI উত্তর আকাশের মাঝারি আকৃতির একটি নক্ষত্র মন্ডল। CASTOR ও POLLUX নামে এর দুটি উজ্জ্ল নক্ষত্র আছে। যাদের  উজ্জ্বলতা যথাক্রমে ১.৬ ও ১.২ এবং দূরত্ব ৪৫ ও ৩৫ আলোকবর্ষ। রুপকথায়  CASTOR ও POLLUX  রাজা জুপিটার ও রানী লিডার সন্তান।  POLLUX এর অনুরোধে তাদেরকে অমরত্ব দান করে আকাশে স্থাপন করা হয়। M35 নামের ৫.৩ প্রভার মুক্ত স্তবকটি অন্ধকার রাত্রিতে খালি চোখে দেখা গেলেও বাইনোকুলারে একে চমৎকার দেখায়। প্রতি বৎসর ১৩ ই ডিসেম্বর এ মন্ডলে উল্কা বৃষ্টি হয়। ১৯৯১ সালে আমার এই উল্কা বৃষ্টি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। সেবার আধ ঘন্টার প্রায় সতেরটি উল্কা দেখা গিয়েছিল।

কর্কট রাশি (CANCER): রাশি চক্রে মিথুনের পরের রাশি কর্কট বা ক্যান্সার। রুপকথায়  HERCULES  যখন  HYDRA এর সাথে যুদ্ধ করছিল তখন বিশাল  CRAB  হাইড্রার  সাহায্যর্থে HERCULES  কে আক্রমন করে। এই রাশিটি তারই প্রতিবিম্ব। এই নক্ষত্র মন্ডলটিতে  কোন উজ্জ্বল নক্ষত্র না থাকলেও  একে চেনা খুব সহজ। LEO এবং GEMINI রাশিদ্বয়ের মাঝখানে অথবা POLLUX, PROCYON এবং REGULUS নক্ষত্র ত্রয় নিয়ে অঙ্কিত ত্রিভুজের মাঝখানে কর্কট রাশি পাওয়া যাবে। কর্কট মন্ডলে M44 বা PRAESEPE  নামে ষষ্ঠ প্রভার একটি নক্ষত্র স্তবক আছে। এর আরেকটি নাম হল BEEHIVE CLUSTER (স্তবক)। আকাশ পরিষ্কার থাকলে খালি চোখেই ৫০০ আলোকবর্ষ দূরের এই আকাশ বস্তটি দেখা যাবে। ১.৫ ডিগ্রি অঞ্চল জুড়ে এর রয়েছে ৭৫টির বেশি নক্ষত্র। বাইনোকুলারে দেখবার জন্যে M44 একটি আদর্শ স্তবক।

ক্যানিস মাইনর (CANIS MINOR):  মিথুন রাশির দক্ষিনে যে উজ্জ্বল তারাটি  চোখ তার নাম  PROCYON যে মন্ডলে এটি রয়েছে তার নাম ক্যানিস মাইনর। হলদে-সাদা বর্নের নক্ষত্রটির উজ্জ্বলতা  ০.৪ প্রভা। সূর্যের অন্যতম নিকটবর্তী  সঙ্গি PROCYON এর দূরত্ব মাত্র ১১.৩ আলোকবর্ষ।

ক্যারিনা (CARINAE): দক্ষিন গোলার্ধের একটি বৃহৎ তারা মন্ডল| ছায়াপথের যে বাহুটি আমরা খালি চোখে দেখি ক্যারিনা সেই বরাবর হওয়ায় মন্ডলটিতে উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক তারা স্তবক ও নিহারীকার রয়েছে| ০.৭ প্রভার CANOPUS মন্ডলের উজ্জ্বলতম ও সমগ্র আকাশে দ্বিতীয় উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। হলদে-সাদা  সুপার জায়েন্ট শ্রেনীর নক্ষত্রটি ১২০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত| NGC3372  একটি বিখ্যাত  DIFFUSE নেবিউলা । ওরিয়ন নেবিউলা থেকে বড়  NGC3372  পরিষ্কার আকাশে খালি চোখেই দেখা যায়। এছাড়া  NGC 2516, IC 2602NGC 3523 নক্ষত্র স্তবকগুলিকে বাইনোকুলারে চমৎকার দেখাবে। ইটা ক্যারনি একটি পরিবর্তনশীল নক্ষত্র । জ্যোর্তিরবিজ্ঞানীদের ধারনা আগামী দশ হাজার বছরের মধ্যে নক্ষত্রটি সুপার নোভা বিষ্ফোরনের মাধ্যমে মৃত্যুর দিকে পতিত হবে।

সিংহ রাশি (LEO):  কর্কট রাশির পরের রাশি সিংহ| একে দেখা যাবে কর্কট রাশির ঠিক পূর্ব দিকে| সিংহ রাশির যে নক্ষত্রটি সহজেই চোখে পড়ে তার নাম REGULUS (রেগুলাস)। নীল-সাদা রংয়ের ১.৪ প্রভার নক্ষত্রটির দূরত্ব পৃথিবী থেকে ৮৪ আলোকবর্ষ । রুপকথায় এই মন্ডলটিকে একটি সিংহের আকৃতি কল্পণা করা হয়, যাকে হারকিউলিস হত্যা করে NEMAEAN জঙ্গলের প্রানীদের রক্ষা করে।

হাইড্রা (HYDRA):  REGULUS নক্ষত্রটির একটু পশ্চিম দিকে দ্বিতীয় প্রভার ALPHARD নামক নক্ষত্র দেখা যাবে। এটি রয়েছে আকাশের সর্বাপ্রেক্ষা বৃহৎ হাইড্রা মন্ডলে। আকাশের প্রায় ১০০ ডিগ্রি অন্চল জুড়ে বিস্তৃত এই মন্ডল। রুপকথায় হাইড্রা যখন গ্রীসের LERNAEAN এলাকায় উৎপাত শুরু করে তখন হারকিউলিস তাকে হত্যা করে। এর উজ্জ্বল  নক্ষত্র ALPHARD কে দেখতে  CASTOR এবং POLLUX এর সংযোগকারী রেখার দিকে লক্ষ করুন।

সপ্তর্ষী মন্ডল (URSA MAJOR): নক্ষত্র মন্ডলটি PTOLEMY এর তালিকা ভুক্ত ৪৮ মন্ডলের একটি। সপ্তর্ষী নাম শুনে মনে হতে পারে যে নক্ষত্র মন্ডলটি সাতটি নক্ষত্র নিয়ে তৈরি। প্রকৃত পক্ষে সপ্তর্ষীর সাতটি নক্ষত্র আকাশের তৃতীয় বৃহত্তম নক্ষত্র মন্ডল  URSA MAJOR এর একটি অংশ মাত্র।

 

শেষ পৃষ্ঠায় মানচিত্র
মানচিত্র দেখবার সময়:
১লা ফেব্রুয়ারী রাত ১১:৩০ টায়
১লা মার্চ রাত ৯:৩০ টায়
১লা এপ্রিল রাত ৭:৩০ টায়

 

গ্রন্থপুঞ্জি:

 

জ্যোতিস্ক বিজ্ঞান
তারা পরিচিতি
নক্ষত্র পরিচয়
The Night Sky

Download PDF

Leave a Reply

Your email address will not be published.